প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ১২:২১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ৬, ২০২৩, ৯:০৭ অপরাহ্ণ
পাবনায় নারী কৃষি শ্রমিক জনতা শিশু সন্তান নিয়ে ফসলের মাঠে
পাবনায় নারী কৃষি শ্রমিক জনতা শিশু সন্তান নিয়ে ফসলের মাঠে
মাসুদ রানা,পাবনা প্রতিনিধি : দ্রব্যমূল্যের উধার্বগতির কারণে একার উপার্জনে সংসার চালাতে হিমশিম খান শফিকুল। বাধ্য হয়ে স্ত্রী জনতা খাতুনকেও কৃষি শ্রমিকের কাজ বেছে নিতে হয়েছে। তার কোলে ৭ মাসের কন্যা শিশু সুরাইয়া। শিশু সুরাইয়াকে নিয়েই কৃষি কাজে আসতে হয় শফিকুল-জনতা দম্পতিকে। জিনিসপত্রের যে দামে,তাতে একার আয়ে সুংসার চলতি চায়না। তাইতো এ সুমায় রসুন তুলার কাজ করি,সুংসারে কিছু আয় হয়,ছেলে-মেয়েকে তিন বেলা খাবার দিতে পারি।
কথাগুলো বললেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের বরদানগর গ্রামের শফিকুলের স্ত্রী জনতা খাতুন। ৪ সন্তানের মা জনতা খাতুন একজন কৃষি শ্রমিক। বাবা শফিকুল ইসলামও কৃষি কাজ করেন। ৩ মেয়ে এবং ১ ছেলে নিয়ে ৬ জনের সংসার তাদের। কাজের ব্যস্ততার এমন চৈত্রের সময় রোদ থেকে বাঁচতে,একটু ছায়া পেতে মাঠের মধ্যে বাঁশ,পলিথিন ও খড়কুটো দিয়ে তৈরী করা হয়েছে ভাওর (অস্থায়ী কুঁড়েঘর)। এই ভাওরের মধ্যেই খালি গায়ে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে সাত মাস বয়সী শিশু সুরাইয়া। যেন রাজ্যের ঘুম পেয়ে বসেছে তাকে। ঘামের ছাপ স্পষ্ট শিশুটির চোখে মুখে। সুরাইয়ার কৃষি শ্রমিক মা জনতা খাতুন তখন অদূরে রোদে বসে গৃহস্থের জমি থেকে তোলা শুকানো রসুনের ঝোঁপা বাঁধছিলেন।
কথা বলার জন্য এগিয়ে এলেন জননী জনতা খাতুন। জনতা খাতুন জানান,সুরাইয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম একজন কৃষি শ্রমিক। তাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয় জন। পৃথক সংসার হলেও শ্বশুর শ্বাশুড়ি জীবিত রয়েছেন। শফিকুলরা দুই ভাই। এক মাস শফিকুল এবং এক মাস অপর ভাই এভাবে পিতা মাতার ভরণ পোষণ করেন ওরা। ফলে তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন। পরিবারের খরচ মেটাতে,স্বামীকে সহায়তার জন্য চৈত্র মাসের এমন দুপুরেও সাত মাস বয়সী শিশু কন্যাকে ভাওরে শুইয়ে রেখে কাজ করছি। দুধের শিশু,ওকে বাড়িতে রেখেও আসতে পারিনা। তাই প্রতিদিন প্রায় আট ঘন্টা রোদ ও ভাওরের সামান্য ছায়ায় কাটাতে হয় সুরাইয়াকে।
দুপুরে কাজের বিরতির সময় হওয়ায় বাড়ি ফেরার তাড়া। ঘুমের শিশুকে বুকে তুলে নেন জনতা। হাঁটতে থাকেন রোদের মধ্যে। শিশুটির চোখ মুখে রোদের ঝিলিক পড়লেও তাকায়না চোখ খুলে। এরই মধ্যে এগিয়ে আসে সুরাইয়ার বড় বোন সাদিয়া। কোল বদল হয় সুরাইয়া। মায়ের কোল থেকে জায়গা হয় বোনের কোলে। ওরা এগুতে থাকে বাড়ির দিকে। এক ঘন্টার বিরতি। আবার যে কাজে ফিরতে হবে। তাই সময় নেই দাঁড়াবার। প্রতিদিন রসুন তুলে মজুরী পান ৩০০ টাকা। এই আয় সংসারে বড় কাজে লাগে। শুধু জনতাই নয়,চলতি মৌসুমে রসুন তোলার কাজে এ অঞ্চলের কয়েক শত নারী কৃষি শ্রমিক কাজ করে থাকেন।
এ বিষয়ে নিমাইচড়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক নুরজাহান বেগম মুক্তি বললেন,এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থকরী ফসল রসুন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা রসুন বীজ বপন করা থেকে শুরু করে রসুন তোলা ও বাঁধা পর্যন্ত নারীরাই কাজ করেন। নারীরা কাজ করার কারণে কৃষকের খরচ কম হয়,কারণ নালেিদর মজুরী কম।
তিনি বলেন,এতে নারীদের ঠকানো হচ্ছে। কারণ পুরুষের সমান কাজ নারীরা করছেন,অথচ মজুরী পাচ্ছেন কম। তিনি এ বৈষম্যের অবসান চান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এ মাসুম বিল্লাহ বললেন,এ অঞ্চলে কৃষি কাজে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। চলতি মৌসুমে রসুন তোলার কাজে এবং তা সংরক্ষষণে নারীরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ
এমরান সোনার
প্রকাশক ও বার্তা সম্পাদক
: মোঃ জামিল হায়দার (জনি)
ঠিকানা : হরিদা খলসী(৬৪০৩),
নলডাঙ্গা, নাটোর
যোগাযোগ : ০১৩১১-৬৯৬৯৫০
ইমেইল :
naldangabatra6789@gmail.com
Copyright © 2024 নলডাঙ্গা বার্তা. All rights reserved.