হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে নাইন মার্ডার মামলায় সাংবাদিকসহ ৩ আসামি গ্রেফতারে সমালোচনার ঝড়।চেয়ারম্যান আহাদকে আনা হবে রিমান্ডে।
আকিকুর রহমান রুমন, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ৯ মার্ডার মামলার আসামি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মিয়া,স্হানীয় এক সংবাদকর্মী রায়হান উদ্দিন সুমন ও এক ইউপি চেয়ারম্যান আহাদ মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করেছেন থানা পুলিশ।
আ’লীগ নেতা শাহজাহান মিয়া ও সংবাদকর্মী রায়হান উদ্দিন সুমন গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে এই মামলার আইও এসআই জাহাঙ্গীর মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সাড়া না পাওয়ায় কিছু জানা সম্ভব হয়নি। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কবির হুসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শাহজাহান মিয়া গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এছাড়াও মামলার আইওর সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন,যখন যা কিছু প্রয়োজন মনে করেন তখন সবকিছু আপডেট জানতে পারবেন। পুনঃরায় আবারও মামলার আইও এসআই জাহাঙ্গীর মিয়ার মুঠোফোন নাম্বরে ফোন দিয়ে সারা না পাওয়ায় তার হোয়াটসঅ্যাপে নক করা হলে,তাহার সাড়া পাওয়া যায়। তবে তিনি প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,মামলার ব্যস্ততার কারনে মোবাইলের সাথে একপ্রকার দূরসম্পর্ক ছিলো! তবে তিনি দু’জন আসামি গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিতসহ এই মামলার ৩জন আসামি গ্রেফতারের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন,গত শুক্রবার রাতে নতুন বাজার থেকে গোপন সংবাদের মাধ্যমে আসামি রায়হান উদ্দিন সুমনের অবস্থান জানতে পারি আমি।
পরে ওসি স্যারের নির্দেশে আমার সহযোগী অফিসারদেরকে সাথে নিয়ে স্হানীয় নতুন বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করি। রায়হান উদ্দিন সুমন মামলার এজাহার নামীয় ১৩২নং আসামি। পরে হবিগঞ্জ সদর থানার হাজতে রাখা হয় এবং আজ ১৯ অক্টোবর(শনিবার) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। এছাড়াও মামলার এজাহার নামীয় ১১নং আসামি ১৩নং মন্দরী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আহাদ মিয়াকে র্যাব ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়।
এছাড়াও ঢাকা থেকে র্যাব-১ এর অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন এজাহার নামীয় ৬নং আসামি বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহজাহান মিয়া। গত ১৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)র্যাব-১ এর অভিযানিক একটি দল থাকে গ্রেফতার করেন। পরদিন ১৮ অক্টোবর(শুক্রবার) ঢাকা থেকে বানিয়াচং থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে থানার কার্যক্রম শেষ করে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন অফিসার ইনচার্জ ওসি কবির হুসেন।
এব্যাপারে সর্বশেষ জানতে নাইন মার্ডার মামলার আইও এসআই জাহাঙ্গীর মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,মামলাটির পূর্বের তুলনায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। যেমনটি এই মামলার ৩ জন আসামি গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাই বুঝতে পেরেছেন। এমনকি পুলিশের প্রতি জনগণের আস্তা ও স্বস্তি ফিরে পেয়েছে বলে মনে করি আমি। থানার ওসি সাহেবের নির্দেশে সুকৌশলে ইতিমধ্য তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও আমি নতুন অবস্থায় নিহত নয়জন ভিকটিমের মধ্য কারো বাড়ীতে যাই নাই। এর পূর্বেও কখনো যাওয়া হয় নাই। বর্তমানে তদন্তভার এর দায়িত্ব পাওয়ার পর ওসি সাহেবের নির্দেশে কয়েকজন ভিকটিমের বাড়ীতে গিয়েছি এবং তাহাদের স্ত্রী বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছি। মামলার গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান আহাদ মিয়াকে রিমান্ডে আনার জন্য আবেদন করা হবে এবং অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মামলার আইও। এদিকে এক সাংবাদিক গ্রেফতার ও আ’লীগ নেতা শাহজাহান মিয়া গ্রেফতারের বিষয়টি জানাজানি হয়ে হয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও হাটবাজারের চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে এই বিষয় সমালোচনা। সত্য একটি ঘটনাকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্যেশো নিয়েই আজ এমন মিথ্যা মামলার আসামি করে এই নাটক সাজানো হয়েছে। আজ মিথ্যা মামলার নাটক সাজিয়ে যাদেরকে আসামি করা হয়েছে এবং তাদেরকে বাড়িঘর ছাড়া সহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এমনকি গ্রেফতারও চালানো হচ্ছে এই মিথ্যা মামলায়। একদিন ঠিকই এসবের সত্যতাও বেরিয়ে আসবে এবং সঠিক আসামিদেরকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যারা এতোসব ঘটনা ঘটিয়েছেন সেই ৫ আগষ্টে সারাবিশ্বের লোকজন কমবেশি অবগত রয়েছেন বলেই এসব আলোচনা চলছে হাটবাজারসহ বিভিন্ন মহলে।
উল্লেখ্য, গত ৫আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী এক দফা ছাত্র আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে ৮জন নিহত ও আন্দোলনকারীদের হামলায় সুহেল আখঞ্জি নামের এক সংবাদকর্মী ও সন্তুশ দাস চৌধুরী নামের এক এসআই পুলিশ সদস্যসহ ১০জনের প্রানহানীর ঘটনা ঘটে এবং শতাধিক এর উপরে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে আন্দোলনকারীগন থানা ঘেরাও করে সকল পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং থানায় আগুন দিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র গুলাবারুদসহ সরকারি সবকিছু লুটপাট ও ভাংচুর তান্ডবলীলা চালান আন্দোলনকারীরা। এই দিন করা হয় আ’লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা ভাংচুর লুটপাট। আগুন দেওয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা একজন ইউপি চেয়ারম্যান এর বাড়ি। অন্যদিকে ১৩ ঘন্টা পর সকল অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে যান সেনাবাহিনী। এই ঘটনার ১৬দিন পর ৫আগষ্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া শিশু হাসানের পিতা ছানু মিয়া ৯জন হত্যার অভিযোগে সবার পক্ষে সাবেক দুই এমপিকে হুকুম দায়ী আসামি দিয়ে ১৬০জন নামীয় ও অঞ্জাত ৩০০জন মোট ৪৬০জন আসামি করে একটি মামলা করেন।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ © নলডাঙ্গা বার্তা