নড়াইলে চোরাই মালামালসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ০৪(চার) সদস্য গ্রেফতার।
খন্দকার ছদরুজ্জামান, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার কাশিপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে মোঃ হাদিউজ্জামানের লোহাগড়া বাজারে মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটের ভিতরে “বিসমিল্লাহ টেলিকম” নামে একটি মোবাইল ফোনের দোকান আছে। তার দোকানে বিভিন্ন ব্রান্ডের এন্ড্রয়েড মোবাইল, বাটন মোবাইল ফোন, এবং ফোনের বিভিন্ন ধরনের মালামাল আছে ।
তিনি প্রতিদিন সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকা হতে রাত্র অনুমান ২২.০০ ঘটিকা পর্যন্ত নিয়মিত তার দোকানে ব্যবসা করেন। প্রতিদিনের মতো গত ২৩ মে/২০২৪ সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকা হতে রাত্র অনুমান ২১.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত তার দোকানে মোবাইল বিক্রয় করে দোকানের হিসাব শেষ করে নগদ অনুমান ১,৩৮,০০০/-(এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার মাত্র) টাকা দোকানের ড্রয়ার এবং দোকানের শাটার তালাবন্ধ করে বাড়ি চলে যান। পরের দিন ২৪ মে/২০২৪ সকাল অনুমান ০৯.৩০ ঘটিকার সময় তিনি তার ফোনের দোকানে গেলে দেখেন, দোকানে নতুন তালা। তখন তিনি দ্রুত লোহাগড়া বাজার কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। বাজারের সভাপতিসহ কমিটির সকল সদস্যরা বাদীর দোকানে উপস্থিত হন। তাদের সামনে দোকানে লাগানো নতুন তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করলে দেখতে পান, ১৪০ টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন অজ্ঞাতনামা চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। যার মূল্য অনুমান- ২১,৬০,০০০/- (একুশ লক্ষ ষাট হাজার) টাকা মাত্র এবং দোকানের ড্রয়ার ভেঙ্গে ড্রয়ারে থাকা ব্যবসার নগদ অনুমান ১,৩৮,০০০/-(এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার মাত্র) টাকা চুরি করে নেয়। পরবর্তীতে মোঃ হাদিউজ্জামানের দোকানের পাশের তোয়া টেলিকম দোকানের মালিক জনৈক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন (৩৩), পিতা-মৃত কালিয়া, সাং-মদিনাপাড়া, থানা- লোহাগড়া, জেলা-নড়াইল এর ফোনের দোকানেও একটি নতুন তালা দেওয়া দেখে তোফাজ্জেল হোসেন হৈচৈ করে উঠলে লোহাগড়া বাজার কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি, জয়েন্ট সেক্রেটারীসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা তার দোকানের নতুন তালা ভেঙ্গে দোকানের ভিতরে যেয়ে দেখে অনুমান ৮০/৯০ টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন অজ্ঞাতনামা চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। এসব মোবাইলের মূল্য অনুমান-২,৮০,০০০/- (দুই লক্ষ আশি হাজার মাত্র) টাকা সহ ড্রয়ারের তালা ভেঙ্গে ড্রয়ারে থাকা ব্যবসার নগদ-১,৮০,০০০/- (এক লক্ষ আশি হাজার টাকা মাত্র) চুরি করে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২৫ মে/২০২৪ মোঃ হাদিউজ্জামানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে লোহাগড়া থানায় চুরি মামলা নং-২৪, তারিখ-২৫/০৫/২০২৪ খ্রিঃ, ধারাঃ ৩৮০/৪৫৭ পেনাল কোড রুজু করা হয়। নড়াইল জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোহাঃ মেহেদী হাসান মহোদয়ের নির্দেশে চোরাই মালামাল উদ্ধার সহ অজ্ঞাতনামা চোরদের গ্রেফতারে মাঠে নামে জেলা পুলিশের একাধিক চৌকস টিম।
গত ২৬ জুলাই/২০২৪ সকাল ০৭:২০ ঘটিকার সময় সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের ইনচার্জ জনাব মোঃ শাহ্ দারা খান এর তত্ত্বাবধানে এসআই (নিঃ) মোঃ ফিরোজ আহম্মেদ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং লোহাগড়া বাজারে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার জনাব মোহাঃ মেহেদী হাসান মহোদয়ের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) জনাব তারেক আল মেহেদীর তত্ত্বাবধানে লোহাগড়া থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার যৌথ টিম অভিযান পরিচালনা করে প্রথমে আসামি কামাল হোসেনকে কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন চাপিতলা গ্রাম হতে গ্রেফতার করে এবং তার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে পুলিশি অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ রফিক মোল্যাকে একই গ্রাম হতে গ্রেফতার করে । উপরোক্ত দুই জনের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে আসামি সেলিম মিয়াকে তার নিজ বাড়ি নিয়ামতপুর, মুরাদনগর, কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত ০১নং আসামি মোঃ রফিক মোল্যার হেফাজত হতে চুরি যাওয়া ০১টি মোবাইল ফোন এবং তার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে অভিযান পরিচালনা করে ০২নং আসামি সেলিম মিয়ার নিকট থেকে ০১টি মোবাইল ফোন এবং তাদের দুই জনের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ০৩ নং আসামি কামাল হোসেনের নিকট হতে চুরি যাওয়া মোবাইলে ব্যবহৃত সিম নং-০১৮৪০৩০৫৯১৭ উদ্ধার করা হয়। ধৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে ধৃত আসামি মোঃ রফিক মোল্যা নিজের দোষ স্বীকার করে এবং অন্যান্য আসামিদের নাম উল্লেখ করে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই(নিঃ) এস এম হাসিবুর রহমান ধৃত আসামিদের জবানবন্দি ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চুরির ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং চুরির ঘটনায় জড়িত আসামি মোঃ সালাউদ্দিন (২৩), পিং-মৃত রফিকুল ইসলাম, সাং-মছাঘোড়া, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লাকে শোন অ্যারেস্ট দেখান। আসামি মোঃ সালাউদ্দিন খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা থানার একটি চুরির মামলায় আটক ছিল। উক্ত আসামিকে ২৭/০৭/২৪ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার দোষ স্বীকার করে এবং ২৮/০৭/২৪ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিগণ আন্তঃজেলা চোর দলের সক্রিয় সদস্য। ধৃত আসামিগণ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন থানা ও জেলায় কাটার দিয়ে দোকান কেটে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল চুরি করে থাকে। চোরাই মালামাল উদ্ধার ও অন্যান্য চোরদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ © নলডাঙ্গা বার্তা